ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অত্যাধুনিক সিবিসি ও পোর্টেবল ইসিজি মেশিন দিলেন ডিসি।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল
নারায়ণগঞ্জ: ফাইল চাপা পড়ে থাকার সংস্কৃতিতে গা না ভাসিয়ে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—কথা রাখলেন। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবার সরাসরি জেলার ৮৭ বছরের পুরোনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার চিত্র পাল্টে দিতে এগিয়ে এলেন। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের রোগীদের জন্য অত্যাধুনিক ব্লাড সেল কাউন্টার (সিবিসি) এবং পোর্টেবল ইসিজি মেশিন হস্তান্তর করে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের জরুরি প্রয়োজন মেটালেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) “গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ” কর্মসূচির আওতায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই দুটি আধুনিক যন্ত্র হস্তান্তর করেন।
শিল্পনগরীর প্রথম এই সরকারি হাসপাতালে এতদিন রক্ত পরীক্ষা করা হতো সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল (ঐতিহ্যবাহী হাতে-কলমে) পদ্ধতিতে। হার্টের রোগীদের জরুরি ইসিজি পরীক্ষার জন্যও ছিল না কোনো পোর্টেবল ইসিজি মেশিন, যা গুরুতর অসুস্থ রোগীকে বেড থেকে না নামিয়ে পরীক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক।
সম্প্রতি জেলার অভিভাবক হিসেবে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম হাসপাতালটি পরিদর্শনে গেলে এই জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠিয়ে দ্রুত অনুমোদন নিয়ে আসেন। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের স্বনামধন্য কোম্পানির উন্নত মানের এই দুটি মেশিন ক্রয় করা হয়।
ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. জহিরুল ইসলাম এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, “আগে আমাদের এখানে অটোমেটিক সিবিসি মেশিন ছিল না। এখন আমরা আরও নির্ভুলভাবে প্লাটিলেট কাউন্টসহ অন্যান্য ব্লাড টেস্ট করতে পারব। এতে ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে। পোর্টেবল মেশিনের কারণে এখন সরাসরি রোগীর বেডের কাছে গিয়ে ইসিজি পরীক্ষা করা যাবে।”
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, “আমাদের হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও আমরা কাউকে ফেরত দিই না। এই নতুন মেশিনগুলো আমাদের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। জেলা প্রশাসক শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই নয়, জেলার প্রতিটি বিভাগের বিষয়েই খুবই মনোযোগী—এটাই একজন প্রকৃত জেলা প্রশাসকের বৈশিষ্ট্য।”
এদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ জানান, হাসপাতালের একটি পরিত্যক্ত ভবন অপসারণ করা হয়েছে এবং নতুন ভবনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা বাস্তবায়নে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। এর মধ্যে ডেঙ্গুর ঝুঁকি এড়াতে জেলা প্রশাসক ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন’ কর্মসূচির আওতায় সেখানে বাগান তৈরি করে দিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “নারায়ণগঞ্জ জেলার কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা সরকারি হাসপাতালগুলোর মানোন্নয়নে কাজ করছি। ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল যেখানে প্রতি মাসে লক্ষাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, সেখানে উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।”
তিনি ঘোষণা করেন, “আগামী রবিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে মেশিনগুলো পুরোদমে চালু হবে। আমাদের লক্ষ্য সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।” তিনি ডাক্তারদের উদ্দেশে পূর্ণ মনোযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাঈমা ইসলাম, সহকারী কমিশনার মো. তারিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
রিপোর্ট জয়নুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
